রিফিউজি
ইউরোপ এখন নিজের পাপের খেসারত দিচ্ছে। প্রায়শ্চিত্ত করার কতো যজ্ঞের ব্যবস্থা বেদে নাই। খ্রিস্টিয় তৃতীয় শতকে লক্ষ লক্ষ ‘ পূবালী’ জনগণ সাগর পাড়ি দিয়ে রোমে ঠাঁই নিয়েছিলো। চতুর্থ শতকে পূবের দেশগুলো ( মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা) থেকে আসা মানুষের হার এতোই বেড়ে গিয়েছিলো যে এই সকল অভিবাসীদেরকে রোমানাইজেশন করার প্রক্রিয়াটিও থমকে গিয়েছিলো। রোমান সাম্রাজ্যের প্রতি বাধ্যতামূলক লোক-দেখানো আনুগত্য ছাড়া প্রকৃতপক্ষে তারা রাজার আনুকূল্যের তোয়াক্কা করতো না।
ইউরোপের ইতিহাসে খ্রিস্টিয় তৃতীয় শতক থেকে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের সময়কালটা ছিলো এই অঞ্চলের জনমিতিগত বিন্যাসের দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কালপর্ব। খাঁটি চকচকে রোমান গৌরব ধীরে ধীরে মিইয়ে যায়। দুনিয়ার উপর থেকে রোমান রুস্তমি শেষ হয়ে যায়। এর জন্য কিছু কিছু ইউরোসেণ্ট্রিক ঐতিহাসিক রোমান সভ্যতার ধ্বংসের কারণস্বরুপ “ অভিবাসী আগ্রাসন” চিহ্নিত করেছেন। এই যুক্তির তলায় যে সব অনুমান কাজ করে সেগুলো মূলতঃ ইতিহাসবোধহীন লোকদের মূর্খামি শুধু নয়, নৃতাত্ত্বিক শুদ্ধতার বয়ানদাতার ফ্যাসিস্ট বয়ান। অভিবাসনই এখন সস্তা শ্রমিক পাওয়ার একমাত্র উপায়।
শরণার্থী শুধু পূব থেকে পশ্চিমে যায় নাই, পশ্চিমের মানুষও পূবে এসে ঠাঁই নিয়েছে। ওসমানিয়া খিলাফতের ইতিহাসের বাইরে পূর্ব ও পশ্চিমা ইউরোপের রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও জনমিতিগত বিন্যাস আলাপ করে লাভ নাই।
চৌদ্দ শতকে আসখেনাজিম ইহুদিরা সুদূর ব্যাভারিয়া থেকে এসে তুর্কিতে আশ্রয় নিয়েছিলো। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ১৪৯২ সালে প্রায় এক লক্ষ সেফারদিম ইহুদী স্প্যানিশ ইনকুইজিশন থেকে প্রাণে বাঁচার জন্য তুরষ্কে পালিয়ে এসেছিলো।
অটোম্যান সাম্রাজ্যের বিকাশ ইউরোপীয় জাতিসত্তা পরিগঠনের ক্ষেত্রে প্রভাবিকের ভূমিকা পালন করেছে;
চিরকালই ইহুদীদের নিশ্চিত ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিলো তুরষ্ক।
হাবসবার্গ সাম্রাজ্যে ( অস্ট্রিয়ান এবং দানুবিয়ান রাজত্ব) ঊনিশ শতকের শেষ দিকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ফলে উদ্বাস্তু মানুষদেরকেও আশ্রয় প্রদান করে। জাতীয়তাবাদী নেতারাও তুরষ্কের আশ্রয়ে বেঁচে ছিলো। সেই সময় হাজার হাজার হাঙ্গেরিয়ান, পোলিশরা পালিয়ে তুরষ্কে আশ্রয় নেয়।
ইউরোপের ইতিহাসে অটোম্যান ও হাবসবার্গ সাম্রাজ্যের অবদান নানা দিক থেকে বিশ্লেষণ করা যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইউরোপীয় রাষ্ট্রের ভ্রুণ লালন করেছে এই দুই সাম্রাজ্য। এই অঞ্চলের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে তুরষ্কের অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। বিশ শতকের শেষ ভাগে ও বিশ শতকের প্রারম্ভে অটোম্যান সাম্রাজ্যের হাঙ্গেরিয়ান, পোলিশ ও একত্রিত হওয়ার যে কোন কারণই রাজনীতি। ব্যক্তি ও সমষ্টির স্বার্থ একাকার হওয়ার অর্থই রাজনীতি।
সমষ্টির পরিসরে একাত্ম ও অভিন্ন স্বার্থে লড়াই করাই রাজনীতি। সেই সময়কার ইউরোপীয় জাতীয়তাবাদ ও ভারতীয় উপমহাদেশে চর্চিত জাতীয়তাবাদের মধ্যে ফারাক বিশাল।
অনুভব ও সম্পর্কের পরিমণ্ডল
পরিক্রমণ করো নিজের অভ্যন্তর অঞ্চলে; টলেমির দুনিয়ায় আর্কিমিডিসের সূত্র; সরোবরে কমল। কেউ কারো দরকারে নয়। কমল ও সরোবর এক সাথেই আছে। প্রকৃতি থেকে আহরণ করছি; আবার প্রকৃতির উপরই তা প্রয়োগ করছি। মানুষের ইন্দ্রিয়, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে আমরা একটি দেহধরা বা দেহ ধরণী নিজের মধ্যে আবিষ্কার করি। দুনিয়ার সাথে দেহের সম্পর্ক ইচ্ছানিরপেক্ষভাবেই সংস্থাপিত। দুনিয়া ও দেহ _ আলাদা নয়।
অন্য অর্থে প্রাণ ও নিষ্প্রাণ, জড় ও জীব, জোছনা ও সুরুজ, দৃশ্য ও অদৃশ্য, জ্ঞাত ও অজ্ঞাত মহাকাশ_ সবকিছুর সাথে একাত্ম হয়েই আছে আমাদের এই শরীরখানা।
পঞ্চ ইন্দ্রিয় মূলতঃ অসংখ্য ইন্দ্রিয়ের জন্য বার্তাবাহক, সংবেদ সঞ্চারণমূলক দ্বার, অপরাপর সূক্ষ্ম কিন্তু শক্তিশালী ইন্দ্রিয়জগতের মধ্যমণিদের দূত। এই সকল হাজার ইন্দ্রিয়পুঞ্জ সম্পর্কে আমরা সজ্ঞান নই। মানুষের শরীর সম্পর্কে পরিপূর্ণ সজ্ঞানতা জগতের সাথে পারষ্পরিকতা ও প্রেমাস্পদের মতো নিবিড় ভাব স্থাপনের মধ্য দিয়েই সম্ভব।
নিয়মিত দিন যাপনের নৈমিত্তিকতার মধ্যেই সেই সম্পর্ক স্থাপন করা যেতে পারে। সমগ্র দেহই শ্রমপ্রবণ; কাজ পাগল হাত, চোখ ও মস্তিষ্ক। মস্তিষ্কের সাথে সবকিছুর সংযোগ প্রাকৃতিক। কিন্তু সকল ইন্দ্রিয়ের সমন্বিত বিকাশের জন্য মস্তিষ্কের মর্যাদা আলাদা করার দরকার নাই।
আজ ভেতরে আত্মস্থকৃত কমল ও কমলিনী_ এক সাথে; জোছনা ও সূর্য এক সাথে; চাঁদ ও চন্দ্রিমা এক সাথে। আত্মীয় ও পরমাত্মীয়ের ভেদ রেখা মাঝে মাঝেই লুপ্ত হয়। ইন্দ্রিয়ের মধ্যমণিরা অদৃশ্য। চোখ ভেতরের কিছুই দেখতে পায় না। নাক ভেতরের সুবাস টের পায় না।
ভবেতে ভাবের দোলায় ভাব-ভোলা। উদয় হও গো তুমি, আমার আলাভোলা। কবে এলে, কবে গেলে, থাকলে না কেন কিছুদিন, কিছুই জানি না; শুধু সমাচার খুলে দেখি, তুমি বার বার ফিরে আস ফিরানির বর্তমানে।
‘দিব্য কোরক’ কেন ফুটে না? তুমি না এলে বিস্তৃত বিধানের ধারা উপধারা আমাকে কেবলই নিষেধ করে, এটা করো না, সেটা করো না। তুমি না এলে বার বার রসের রসায়ন, অস্তিত্বের নির্গলিত দ্রবণ নিজে নিজে কেমনে করি পান। চলে যাবার পরও যে দেখে ও দেখায়, তার সাথে সাক্ষাৎ জীবন সদাই বর্তমানের ফিরানিকাল। মাটি ও পানির গুণে প্রস্ফূটন প্রতিজ্ঞায় , এসো, ফুটে উঠি।
অভিবাসী নয়, শরণার্থী। বুশের কোয়ালিশন অব কিলিং এই দায় কিছুতেই এড়াতে পারে না। অস্ট্রিয়া ও জার্মানী সীমান্ত দিয়ে কিছু কিছু শরণার্থী প্রবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। ন্যাটো ( কোয়ালিশন অব কিলার) যে নাটের গুরু, সে কথা বার বার মনে করিয়ে দিতে হবে। সারা দুনিয়াকে শরণার্থী শিবিরে পরিণত করেছে এইসব ঘাতকরা; রক্তপিপাসু কর্পোরেটের কসাইরা; পশ্চিমা দুনিয়ায় কোথাও গণতন্ত্র নাই; আছে কর্পোরেটোক্র্যাসি। এটাই বাস্তবতা। শরণার্থী যতোদিন থাকে যুদ্ধ ততোদিন অব্যাহত থাকে।
মন্তব্য করুন