সুকান্ত গ্রন্থকথন এবং শ্রদ্ধাঞ্জলি

 

“রাজার উপর আর করব না নির্ভর
আমাদের ভাগ্যের আমরাই ঈশ্বর।”

আজ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ৯২তম জন্মবার্ষিকী।১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট তিনি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের সাথে পরিচয় ‘দেশলাই কাঠি’ এবং ‘সিগারেট’ কবিতার মাধ্যমে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন। তারপর, সহপাঠির কাছ থেকে সুকান্ত সমগ্র নিয়ে পড়া এবং মুগ্ধতার সূত্রপাত। ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থে কি অসাধারণ সব কবিতা!কবি দুরারোগ্যে আক্রান্ত হয়ে অতি অল্প বয়সে মারা যায় এটুকুই শুধু জেনেছিলাম।তারপর লাবণী দিদির কাছ থেকে ‘সুকান্ত বিচিত্রা’ নামক এই বইখানি উপহার পাই।

বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে ক্ষণজন্মা কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য জীবনের শেষ কয়েকটা দিন হাসপাতালের বেডে শুয়েও লিখেছিলেন।কবি নজরুলের পর সবচেয়ে প্রতিবাদী যে কণ্ঠস্বরটি মানুষের অন্তরে জায়গা করে নিয়েছে সে সুকান্ত।

সুকান্তকে জানার জন্য সবচেয়ে তথ্যবহুল বই হচ্ছে-বিশ্বনাথ দে সম্পাদিত “সুকান্ত বিচিত্রা”।সুকান্তকে কাছ থেকে দেখেছে,তার সাথে মিশেছে,তাকে জেনেছে এমন তৎকালীন কবি,সাহিত্যিক,তার বন্ধুরা,তার শিক্ষকেরা,কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি,তার পরিবারের মানুষেরা এমন সর্বমোট ৬২ জনের সুকান্তকে নিয়ে করা স্মৃতিচারণ লিপিবদ্ধ আছে এখানে।
সুকান্তের শৈশব, দেয়ালে লেখা তার প্রথম কবিতা,মাতৃহারা ছেলের মাতৃসম বৌদির স্নেহপ্রাপ্তি,বেতারে তার প্রথম কবিতা আবৃত্তি সবকিছুর সুচারু বর্ণনা পাওয়া যাবে এই বইতে।

সুকান্তের ইচ্ছা ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক হওয়া।কিন্তু দুর্ভাগ্য মাধ্যমিকেই সে অংকে পাশ করতে পারেনি।অথচ তার পরের বছরই উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা বইয়ে তার “আঠারো বছর বয়স” কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত হয়।

সুকান্তের এক অভূতপূর্ব কাজ ছিলো “কিশোর বাহিনী” গড়ে তোলা এবং সারা বাংলায় এর বিস্তার ঘটানো। কিশোরদের কাছে সুকান্ত ছিল হিরো।সে একাই এরকম একটা প্রজন্মকে গড়ে তুলছিলেন যা অতুলনীয়।আর এই কিশোর কবিমনে একসময় নিপীড়িত মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রামের আকাঙ্ক্ষা জাগে।সেই সূত্রেই সুকান্তের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান।আর এই সুবাদে সেসময়ের বিখ্যাত কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়সহ অনেকেরই স্বান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয় তার। তৎকালীন কলিকাতা এবং তার আশেপাশের জেলাগুলোতে কমিউনিস্ট পার্টির প্রোগ্রামগুলোতে একসময় সুকান্তের বিদ্রোহসূচক কবিতা আবৃতি একটা আবশ্যিক অংশে পরিণত হয়।

কিন্তু এরপরই শুরু হয় সুকান্তের শৃঙ্খলাহীন জীবন যাপন।ঠিকমতন না খাওয়া, না ঘুমানো, কিশোর বাহিনী এবং কমিউনিস্ট পার্টিতে প্রচুর সময় আর অক্লান্ত পরিশ্রম তার জীবনে কাল হয়ে আসে। সুকান্ত ভট্টাচার্য আক্রান্ত হন যক্ষাতে এবং চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই ১৯৪৭ সালের ১৩মে মৃত্যুবরণ করেন।

জন্মবার্ষিকীতে কবির প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধা।


Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।