“ময়ূর সিংহাসন” নামে এবারের বইমেলায় প্রকাশ পাওয়া এক ঐতিহাসিক উপন্যাস পড়লাম। বইটি নিয়ে বিস্তারিত লিখবো অন্য সময়। তবে এখন একটু বলি।
শাহীনা আক্তার নাম্নী একজন সুলেখিকার অসাধারণ সৃষ্টি। পড়ে যতটুকু পারি বোঝার চেয়ে জানলামই বেশি। ষোল শতক থেকে মুঘল সাম্রাজ্যের ক্ষয়িষ্ণু কাল শুরু হয়। সিংহাসন আরোহণ এবং ভাইদের হত্যার মাঝে শুরু হয় আওরঙ্গজেবের চরিত্রের বিচরণ।
বাংলা-ঊড়িষ্যা সুবাদার আওরঙ্গজেবের বড় ভাই শাহ সুজা দিল্লীর মসনদের জন্য ব্যাকুল কিন্তু সামর্থ্যহীন। মদ্যপ ও আমোদপ্রিয় এ বেচারা হেরে আর পালাতে পালাতে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরাকানে। সেখানে থাকতে স্থানীয় গুটিকয় মুসলিম এর পাল্লায় পড়ে আরাকানী রাজার সন্দেহের খাতায় নাম লেখান। কারণ এরা সম্রাটকে নিয়ে আরাকান রাজ্য দখলের স্বপ্নে বিভোর ছিল। পরবাসী সুবাদার শাহ সুজা আরাকান রাজের রোষানলে পড়েন ও নিখোজ হন। আর তার পুত্র কন্যা ও স্ত্রী রাজার হাতে বন্দী ও নিহত হন। আর একটা বিষয় খুব সূক্ষ্মভাবে এসেছে উপন্যাসে, সম্রাট আওরঙ্গজেবের আগের সম্রাটগণ বেশ ধর্মীয়ভাবে উদার ছিলেন।
কিন্তু ইনি ছিলেন বেশ কড়া ধাঁচের সুন্নী মুসলিম। যার ফলশ্রুতিতে বড় ভাই দারার বিরুদ্ধে মুসলিম হয়েও বিধর্মী ধর্মানুরুক্তির দোহাই দিয়ে অভিযোগ আনেন এবং তার শিরশ্ছেদ করেন। তার সময়েই শুরু হয় অমুসলিমদের জোর করে ধর্মান্তকরণ, যদিও জোর করার আসলে প্রয়োজন খুব ছিল না, কারণ নিম্নবর্গীয়রা এমনিও এসেছে দারিদ্র্য ও ইসলামের সাম্যের আকর্ষণে। তবু এ সময় থেকে ধর্মীয় নির্যাতন বাড়তে থাকল, ইমাম হাকীকতদের ফালাফালি ও লাফালাফিও বেড়ে চলল। এবং ঠিক তার আড়াইশ বছরের মাথায় হিন্দুদের ইংরেজ বেনিয়াদের নীরবে গ্রহণ করার যে প্রবণতা ও আগ্রহ, তার মূল কারণ ও ছিল মুঘল রাজকর্মচারীদের এই অকাট মূর্খতাময় আচরণ। যা হোক, পড়ে দেখুন ভাল লাগবে। সবিস্তারে আরেকদিন এ নিয়ে বলব।
মন্তব্য করুন